নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম ২০২৪
এখন দেশে বা বিদেশে নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলা যাবে নিমিষে! বিকাশ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল ফোনভিত্তিক মানি ট্রান্সফার প্রতিষ্ঠান।
দৈনন্দিন জীবনে বর্তমানে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন বিকাশ ব্যবহার করছে। দূরবর্তী স্থানে টাকা স্থানান্তর করার প্রয়োজন আজকাল প্রায়ই হয়ে থাকে৷ এই লেখাতে জানতে পারবেন নিজে নিজে নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম।
নতুন বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
চলুন জেনে নেয়া যাক গুরুত্বপূর্ণ কতগুলো ধাপ যা সম্পন্ন করে সহজে ঘরে বসে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম বুঝতে পারবেন।
ধাপ-১ঃ বিকাশ একাউন্ট খোলার জন্য প্রথমে গুগল প্লে স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপ নিজের ফোনে ইন্সটল করতে হবে। গুগল প্লে স্টোর থেকে ইনস্টল করলে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।
অ্যাপ্লিকেশনটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করার পর প্রথম কাজ হচ্ছে রেজিষ্ট্রেশন সম্পন্ন করা। এর জন্য শুরুতেই যে স্ক্রিনটি উন্মোচিত হবে সেখান থেকে "লগ ইন/রেজিষ্ট্রেশন" বাটনে ক্লিক করতে হবে ৷
ধাপ-২ঃ পরবর্তী ধাপে দেশ অপশন থেকে বাংলাদেশ সিলেক্ট করে যে নাম্বার থেকে একাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন সে নাম্বারটি লিখতে হবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই প্রদত্ত ফোন নাম্বারটি যেন আপনার ডিভাইসে এক্টিভ অবস্থায় থাকতে হবে।
ধাপ-৩ঃ এবার আপনাকে আমার ব্যবহৃত সিমের অপারেটর নির্বাচন করতে বলা হবে। বর্তমানে দেশে ব্যবহৃত ছয়টি সিম অপারেটরের লোগো থেকে আপনার অপারেটর সিলেক্ট করবেন।
এরপর আপনার নাম্বারটিতে একটি ভেরিফিকেশন কোড চলে আসবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, বিকাশ থেকে আসা যেকোনো কোড একান্ত ব্যক্তিগত তথ্য। এটি কাউকে শেয়ার করা করবেন না এবং বিকাশ কখনও আপনার কোড জানতে চাইবে না।
বিশেষত অপরিচিত কারো প্রলোভনে ভেরিফিকেশন কোড অর্থাৎ ওটিপি এবং পাসওয়ার্ড কখনোই শেয়ার করা যাবে না। এক্ষেত্রে আপনার একাউন্ট অন্যের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
কোডটি নির্দিষ্ট স্থানে দেওয়ার পর বিকাশ পেজ আপনাকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী ধাপে নিয়ে যাবে। এছাড়া আপনি 'Allow' বাটনে ক্লিক করলে কোডটি নির্দিষ্ট স্থানে বসে যাবে।
ধাপ-৫ঃ ভেরিফিকেশন সম্পন্ন হওয়ার পর অ্যাপের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খুলতে সহজ কিছু কাজ করতে হয়। এইজন্য কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও তথ্যের প্রয়োজন হবে। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করতে স্ক্রিনে লেখা "NID এর ছবি তুলুন" লেখাতে ক্লিক করবেন।
এরপর আপনার বৈধ ভোটার আইডি কার্ডটির ছবি তুলতে হবে স্পষ্টভাবে। পরপর দুটি ছবি তুলতে হবে; প্রথমবার এনআইডির সামনের এবং তারপর পেছনের দিকের ছবি তুলে সাবমিট করতে হবে।
এনআইডি'র ছবি সঠিকভাবে প্রদান করলে নিচের ছবির মত আপনার আইডির তথ্যগুলো শো করবেন। আপনার এনআইডি'র সাথে দৃশ্যত তথ্যগুলো সঠিক কিনা চেক করে নিতে পারেন।
ধাপ-৬ঃ পরের ধাপে আপনাকে নিজের সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য সাবমিট করতে হবে। এখানে রেজিষ্ট্রেশনকারীকে তাঁর লিঙ্গ, আয়ের উৎস, আনুমানিক মাসিক আয় এবং পেশা উল্লেখ করতে হবে৷ এই তথ্যগুলো প্রদান করে পরের ধাপে যাবেন তবে একবার চেক করে নিবেন সব ঠিকঠাক দিয়েছেন কিনা।
ধাপ-৭ঃ রেজিষ্ট্রেশনকারীকে ফেইস ভেরিফিকেশনের জন্য স্ক্রিনে দেওয়া বিকাশের নির্দেশনা অনুযায়ী ক্যামেরা ওপেন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন ছবি তোলার সময় আশেপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো থাকে। স্ক্রিনে মার্ক করে দেয়া অংশটুকুর মধ্যেই ভালোভাবে নিজের মুখায়বের ছবিটি তুলতে হবে। ছবি তোলা শেষে স্বয়ংক্রিয় স্ক্যানিং সফলভাবে সম্পন্ন হলে পরবর্তী অংশে যেতে হবে।
প্রয়োজনীয় সকল তথ্য সাবমিট করার পর ভেরিফাই প্রসেস শেষে বিকাশ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক একটি কনফারমেশন এসএমএস পাঠানো হবে এবং সেটি সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে ৷ সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।
ধাপ-৮ঃ বিকাশ অ্যাপ দিয়ে একাউন্ট খোলার সর্বশেষ ধাপটি হলো পিন কোড এবং ইউজার নেম সেট করা। পিন কোডটি হতে হবে পাঁচ ডিজিটের এবং কনফার্মেশনের প্রয়োজনে এটি দুইবার সঠিক ভাবে লিখতে হবে।
চেষ্টা করবেন একটু জটিল ক্রমের সংখ্যা পিন হিসেবে সেট করার এবং বিকাশের গাইডলাইন ফলো করবেন। এতে আপনার একাউন্টটির নিরাপত্তা বজায় থাকবে।
সেটকৃত পিন কোডটি মনে রাখবেন এবং কখনোই অপরিচিত, পরিচিত বা বিবাহিত হলে বউকে পিন শেয়ার করবেন না। বিকাশ থেকে কখনও আপনার পিন কোড বা ওটিপি জানতে চাইবে না - চাইলেও বলবেন না!
পিন এবং ইউজার নেমটি সেট করার মাধ্যমে একাউন্ট তৈরীর পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়ে যাবে। নিজের একটি ছবি প্রোফাইলে সেট করে বিকাশ ড্যাশবোর্ডে প্রবেশ করতে পারবেন। আর চাইলে স্কিপও করতে পারেন।
বিদেশে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
প্রবাসী নাগরিকগণ চাইলে খুব সহজেই বিদেশে বসে বিকাশ একাউন্ট খুলতে পারবেন। তবে দেশের বাইরে থেকে বিকাশ ব্যবহারে কিছু কিছু ফিচার ব্যবহারযোগ্য না। সেগুলো কেবল দেশে বসে ভালোভাবে ইউজ করা যাবে।
পাসপোর্ট দিয়ে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
আগামীকাল দেশে জরুরি টাকা পাঠাতে হবে? কিংবা আপনার টাকা লাগবে? এখন বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে ব্যবহার করুন বিকাশ অ্যাপ। কিভাবে চলুন জেনে নেই -
ধাপ-১ঃ গুগল প্লে স্টোর থেকে বিকাশ অ্যাপ ডাউনলোড করে ওপেন করুন। প্রথমে যে পেজ আসবে সেখানে থেকে 'লগ ইন' (নতুন একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে) অথবা 'বিকাশ নাম্বার পরিবর্তন' (পূর্বে বাংলাদেশি নম্বর দিয়ে একাউন্ট খোলা থাকলে) বাটনে ক্লিক করে এগিয়ে যাবেন।
ধাপ-২ঃ পরের ধাপে দেশ ও নাম্বার সিলেক্ট করতে হবে। রেজিষ্ট্রেশনকারী যে দেশে ওই মুহুর্তে উপস্থিত থাকবেন উক্ত দেশটি সিলেক্ট করবেন এবং যে নম্বর ব্যবহার করে অর্থ আদান-প্রদান করতে চান সেই নম্বরটি লিখবেন।
ধাপ-৩ঃ এরপর রেজিষ্ট্রেশনকারীর ব্যবহৃত পাসপোর্ট এবং পাসপোর্ট এর দেশত্যাগ বা আগমনের স্ট্যাম্পের একটি ছবি তুলে সাবমিট করতে হবে। ছবিটি যথেষ্ট স্পষ্টভাবে তুলতে হবে যেন পাসপোর্টের অক্ষরগুলো বোঝা যায়।
পরের ধাপগুলো উপরে উল্লেখ করা প্রক্রিয়ায় (ধাপ-৫ থেকে) সফলভাবে সম্পন্ন করার মাধ্যমে সহজেই প্রবাসীরা বিদেশ থেকে বিকাশে টাকা পাঠাতে পারবেন।
দেশের বাইরে থেকে বিকাশ একাউন্ট ব্যবহারে ব্যবহারকারী শুধু সেন্ড মানি, মোবাইল রিচার্জ এবং রেমিটেন্স পাঠানোর সুবিধাগুলো পাবেন। বাকি সব ফিচার এখনো এই পদ্ধতিতে এভেলেবেল নয়।
বর্তমানে যেসব দেশে গ্রাহক বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করতে পারবেনঃ যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইতালি, কাতার, ওমান, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, বাহরাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, চীন, ভারত, জাপান, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, মিশর, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, আলজেরিয়া, অস্ট্রিয়া, বতসোয়ানা, বাহামা দ্বীপপুঞ্জ, বেলজিয়াম, বেলিজ, ব্রাজিল, ব্রুনাই, বুলগেরিয়া, কম্বোডিয়া, ক্যামেরুন, চাদ, ক্রোয়েশিয়া, সাইপ্রাস, সুরিনাম, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, উগান্ডা, ভানুয়াতু, জিম্বাবুয়ে, ম্যাকাও, জাম্বিয়া।
বাটন ফোনে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
স্মার্টফোন ব্যতীত অন্য কোন বাটন মোবাইলে বিকাশ অ্যাকাউন্ট খোলার নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ব্যক্তিগত স্মার্টফোন ব্যতীত অ্যাকাউন্ট খুলতে চাইলে বিকাশ এজেন্টের মাধ্যমে একাউন্ট খুলে নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে যে ডকুমেন্টগুলো প্রয়োজন হবে সেগুলো হচ্ছে -
১. ভোটার আইডি কার্ড এর ফটোকপি,
২. রেজিস্ট্রেশনকারীর পাসপোর্ট সাইজের একটি ছবি এবং
৩. যে সিমে অ্যাকাউন্ট খুলতে চাচ্ছেন উক্ত সিম।
এজেন্টের মাধ্যমে বিকাশ একাউন্ট খুলতে চাইলে এজেন্ট এর কাছে উপর্যুক্ত কাগজপত্রগুলো নিয়ে গেলে তিনি একটি বিকাশ একাউন্ট খুলে দিবেন। এরপর থেকে বিকাশ অ্যাকাউন্টটি সহজেই বাটন সেট থেকে ব্যবহার করা যাবে। যারা অ্যাপ ছাড়া বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম জানতে চান তারাও এই পদ্ধতি ফলো করবেন।
শেষ কথা - বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়ম
এই লেখাটিতে নিজে নিজে বিকাশ একাউন্ট খোলার নিয়মগুলোর প্রায় প্রতিটি পদ্ধতি নিয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। বিকাশ ব্যবহার করে আপনি পল্লী বিদ্যুৎ বিল, উপবৃত্তির টাকা, সেন্ড মানি, ক্যাশ আউট ও অন্যান্য সেবা ব্যবহার করতে পারবেন। বিকাশ অ্যাপ এবং এর যেকোনো ফিচার সম্পর্কিত যাবতীয় প্রশ্নাবলির উত্তর পেতে পটেনশিয়াল আইটি ব্লগে ভিজিট করতে পারেন।
আশা করি বিকাশ পার্সোনাল একাউন্ট খোলার নিয়ম সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য এই আর্টিকেলের মাধ্যমে বুঝতে পেরেছেন। লেখাটি ভালো লাগলে বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কে এমন আরো তথ্য পেতে আমাদের সাথেই থাকবেন৷
0 জন কমেন্ট করেছেন
দয়া করে কমেন্ট নীতিমালা পড়ুন