সেরা ক্যামেরা ফোন চেনার উপায় ২০২৪
আসসালামু আলাইকুম, সেরা ক্যামেরা ফোন নিয়ে আজকে পটেনশিয়াল আইটি ব্লগে আমি A to Z গাইডলাইন দিবো।
আশা করি আমাদের এই রিভিউ আপনাকে সেরা ক্যামেরা ফোন কিনতে সাহায্য করবে। আর হ্যাঁ সবগুলো সেরা ক্যামেরা মোবাইল কিন্তু মিড বাজেটের মধ্যে আলোচনা করেছি। তাহলে আর দেরি কেন চলুন জেনে নেই কোনগুলো সেরা ক্যামেরার ফোন।
সেরা ক্যামেরা ফোন চেনার উপায়
আমরা অনেক সময় মেগা পিক্সেল দেখে নির্ণয় করি কোন ফোনের ক্যামেরা ভালো। কিন্তু এটি অনেকটা ভুল ধারণা। এই ধরুন ৪ লাখ টাকার DSLR এর ক্যামেরা মাত্র ১২ মেগাপিক্সেল হয়!
তাহলে একটি ভালো সেরা ক্যামেরা স্মার্টফোন কি দেখে নির্ণয় করা যায়? চলুন জেনে নেই কোন ফোনের ক্যামেরা সবচেয়ে ভালো।
সেন্সর দেখে ফোন কিনুন
আমি আগেই বলেছি মেগাপিক্সেল দিয়ে ক্যামেরা মাপজোখ করতে যাবেন না। তাই দেখবেন কোন ফোনের সেন্সর কত বেশি। তবে আমাদের স্মার্টফোনগুলোর সাইজ ছোট হওয়াতে সেন্সর ছোট হবে এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তারপরেও এখন ১ ইঞ্চির সেন্সরওয়ালা ফোনও আছে!
আপনার ফোনের সেন্সর যত বেশি হবে এটি তত ভালো (পড়ুন বেশি) আলো ক্যাপচার করতে পারবে এবং তত ডিটেইলস ছবি দিবে। আর ছবির মান ঝকঝকে ও ন্যাচারাল মনে হবে।
অ্যাপারচার নাম্বার দেখুন
আমরা যখন ফোন কিনি তখন অনেকেই অ্যাপারচার নম্বর ঠিক মত দেখি না। ফোনের বক্সে বা তাদের অফিসিয়াল সাইটে স্পেসিফিকেশন দেওয়া থাকে। সেখানে ক্যামেরার মেগাপিক্সেলের পাশে f/F দিয়ে একটা সংখ্যা লেখা থাকে। এটিই মূলত অ্যাপারচার নামে পরিচিতি। কিন্তু কথা হলো অ্যাপারচার নম্বর দিয়ে আসলে কি বুঝানো হয়?
পদার্থবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অ্যাপারচার দ্বারা একটি লেন্স তার ডায়ামিটার অনুপাতে কি পরিমান আলো আহরন করতে পারে বুঝায়। একটি লেন্সের অ্যাপারচার সংখ্যা বা নম্বর যত কম হবে লেন্সটি তত বেশি ওপেন হবে। আর যত বেশি ওপেন হবে লেন্সটি তত বেশি আলো সংগ্রহ করতে পারবে। তাই লেন্সের অ্যাপারচার যত কম হবে ক্যামেরাটি তত ভালো কোয়ালিটির হবে। ক্যামেরা সেরা ফোন কিনতে চাইলে তাই কম অ্যাপারচার নম্বর দেখে কিনবেন।
কয়টি ক্যামেরা থাকা ভালো?
তিন ফুটাওয়ালা আইফোন সবচাইতে ভালো তাই না!? হা হা... কিন্তু আমরা মিড বাজেটের ক্যামেরা নিয়ে কথা বলবো বলেছি। অনেক ফোনে তো ৪-৬টা পর্যন্ত ক্যামেরা দিয়ে ভরে ফেলে। তাহলে আমাদের মিড রেঞ্জের একটি ফোনে কয়টা ক্যামেরা দরকার?
আমরা চেষ্টা করবো ম্যাক্সিমাম ৩ ক্যামেরাওয়ালা ফোন কিনতে (যদি বাজেটে হয়)। তবে এখানে কিন্তু জিনিস চেকলিস্ট আকারে লিখে নিন। ৩ ক্যামেরাতে যা যা অবশ্যই দেখবেন -
- প্রাইমারি সেন্সর (১ নম্বর ক্যামেরা) টপ নচ হতেই হবে। এখানে কোন ছাড় দেওয়া চলবে না।
- ফোনের ২য় ক্যামেরা বা আলট্রা ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স কমপক্ষে ১২ মেগাপিক্সেল হতে হবে। এটি যত বেশি হবে ছবির ডিটেইলস তত ভালো আসবে।
- ৩ নম্বর ক্যামেরা হতে হবে টেলিফটো জুম লেন্স। কিন্তু একটা কথা মনে রাখবেন, টেলিফটো লেন্স থাকলেই হবে না। এটা দিয়ে পোর্ট্রেইট ছবি তোলা যায় কিনা তা দেখে নিবেন।
এখানে অনেকে আমাকে প্রশ্ন করতে পারেন সিয়াম ভাই, ম্যাক্রো লেন্সের কথা বললেন না কেন? আসলে অনেক কোম্পানি আলট্রা ওয়াইড এঙ্গেল লেন্সের ভিতর ম্যাক্র লেন্স দিয়ে দিতে পারে। এই জন্য আলট্রা ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স কমপক্ষে 12MP হলে সেটা ম্যাক্রো লেন্সের জন্য গুড এনাফ।
ক্যামেরায় ধারাবাহিকতা দেখে নিন
ফোন কিনতে গেলে বাজারে প্রচুর মোবাইল পাবেন যেখানে তিনটি ক্যামেরা রয়েছে। তবে এই ক্যামেরাগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা আছে কিনা তা দেখে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। অনেকে শুধু প্রাইমারি ক্যামেরা দিয়ে ভালো ছবি তুলতে পারে। আলট্রা ওয়াইড এঙ্গেল লেন্স ও টেলিফটো জুম লেন্স কোনো কাজের না তাহলে আপনার ফোনের ক্যামেরা ভালো নয় এটি বলতেই হয়।
কাজেই চেষ্টা করবেন তিনটি ক্যামেরা দিয়েই যেন মোটামুটি ভালো ছবি তোলা যায়। যেহেতু আমাদের বাজেট কম তাই মোটামুটির বেশি আশা করা যাবে না।
অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন আছে তো?
অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (ওআইএস) হলো এক ধরনের প্রযুক্তি যা লেন্সের ভিতরে একটি ছোট্ট জাইরো-স্কোপ (gyroscope) ব্যবহার করে ছবি তোলা বা ভিডিও করার সময় আপনি নাড়াচাড়া, হাত ঝাঁকুনি দিলেও ছবি বা ভিডিও ঠিকঠাক মত তুলে দেয়।
অলরেডি অনেকে বলবেন সিয়াম ভাই, মিড বাজেটের ফোনে আরও কত ফিচার এড করবেন? তাদের জন্য সুখবর হচ্ছে আজকাল ২০-৩০ হাজার টাকার কিছু ফোনে অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (ওআইএস) দেওয়া থাকে।
আরো পড়ুনঃ নতুন ফোন কেনার পর করণীয়
মূলত আপনার ঝাঁকুনি বা শেইকের সাথে লেন্সও শেইক করে পজিশন এডজাস্ট করে নেয়। তবে ১০০% নিখুঁত না হলেও একদম মিনিমাইজ করে ফেলে। যারা রাতে ভিডিও বা ফটোগ্রাফি করেন তাদের জন্য ওআইএস মারাত্নক দরকারি জিনিস।
এখানে একটা টোটকা বলে দেই। অনেক সময় অপটিক্যাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন (ওআইএস) ফোনে আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলে দোকানি বলবে ইআইএস আছে। ইআইএস মানে হলো ইলেকট্রিকাল ইমেজ স্টেবিলাইজেশন যা মূলত ওআইএস'র মত কাজ করে কিন্তু সফটওয়্যারের সাহায্যে করে। যার ফলে এটির কোয়ালিটি ওআইএস থেকে কম হয়ে থাকে।
ক্যামেরা ওপেন করে ইউআই দেখুন
UI বলতে ইউজার ইন্টারফেজ বুঝায়। আমরা সচারচর ক্যামেরা খুলেই দেখে নেই অনেকগুলো ফিল্টার অপশন আছে কিনা। আসলে এটা দেখার কোন প্রয়োজন নেই!
আর এই ব্যাপারে Oppo আর Vivo ফোন সবার রাজা; প্রচুর ফিল্টার অপশন দিয়ে রাখে। ফিল্টার খারাপ বলবো না তবে দেখতে হবে এই ফোনে প্রো (Pro) বা ম্যানুয়াল (Manual) মোড আছে কিনা। আর এটার ব্যবহার একবার শিখে গেলে আপনি ফটোগ্রাফির ওস্তাদ হতে পারবেন।
FPS এর কারুকাজ
ফোনের স্পেসিফিকেশন পড়ার সময় '1080p video at 30 fps; 720p video at 30 fps' এমন লেখা খেয়াল করেছেন নিশ্চয়? সব সময় 1080p video at 60 fps এই স্পেসিফিকেশনের ফোন কেনার জন্য চেষ্টা করবেন।
কারণ 30 fps এর ভিডিও খারাপ আমি তা বলবো না। তবে ঝামেলা হবে সেই ভিডিও যদি আপনি এডিট করতে চান। তাই চেষ্টা করবে 60 fps এর ফোন কিনতে পারা যায় কিনা। সেক্ষেত্রে ভিডিও এডিটিংয়ের সময় স্লো মোশন, কোয়ালিটি ড্রপ, ভিডিও থেমে থেমে যাওয়া এই টাইপের প্যারায় পড়বেন না।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ - ফোনের প্রসেসর
আপনার তোলা ছবি বা ভিডিও কতটা ভালো হবে তা অনেকাংশেই প্রসেসরের উপর ডিপেন্ড করবে। তবে হ্যাঁ মিড রেঞ্জে কোন ফোন ভালো প্রসেসর দিচ্ছে তা খেয়াল করবেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে Snapdragon সিরিজের 5G প্রসেসর রেকমেন্ড করবো।
কোন ব্র্যান্ডের ফোনের ক্যামেরা ভালো?
এখন চলে এসেছি আপনাদের বহুল জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন কোন ফোনের ক্যামেরা ভালো? আমাদের বাজেট রেঞ্জের মধ্যে আমি SAMSUNG Galaxy S21 FE 5G ছাড়া অন্য কোন ফোন সাজেস্ট করতে পারছি না। ভারতে বর্তমানে এই ফোনের অফিশিয়াল দাম ৪০ হাজার রুপির মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে আর বাংলাদেশে ৬৫-৭০ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে।
আগেই মাফ চেয়ে নিচ্ছি আমি পোস্ট লেখার সময় বাংলাদেশে এই ফোনের দাম এতো বেশি ছিল না। ভারতের সাথে প্রাইসে ৩০ হাজার টাকার পার্থক্য হতাশাজনক। যাই হোক এটি কোন স্পন্সর পোস্ট না। অনেক দিন ধরে আপনারা জানতে চেয়েছেন ক্যামেরা ভালো কোন ফোনের? তাই আজকে কম দামে সেরা ক্যামেরা ফোন নিয়ে আর্টিকেল লিখেছি।
0 জন কমেন্ট করেছেন
দয়া করে কমেন্ট নীতিমালা পড়ুন