পটেনশিয়াল আইটি
https://www.potentialit.xyz/2023/04/baby-care.html
নবজাতকের ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন (সকল তথ্য)
দাঁত শিরশির কেন করে?
শাকিল আর ফারজানা সদ্য বাবা-মা হয়েছেন। প্রথম সন্তানকে নিয়ে তাদের আদর যত্নের কমতি নেই। পরিবারের অভিজ্ঞ অভিভাবকরা যে যা বলছেন সেভাবেই নবজাতক সন্তানের যত্ন নিচ্ছেন তারা। কিন্তু সপ্তাহখানেকের মধ্যেই শিশুর শরীরে দেখা দিল র্যাশ।
কী করা উচিত বুঝতে না পেরে তারা ছুটলেন চিকিৎসকের চেম্বারে। জানতে পারলেন, সন্তানের ত্বকের যত্নে ব্যবহার করা কিছু প্রোডাক্ট থেকেই এ সমস্যা শুরু হয়েছে। এই দম্পতির মতো অনেকেই নবজাতক সন্তানের ত্বকের যত্নে বিভিন্ন প্রোডাক্ট ব্যবহার করেন।
অথচ পৃথিবীর আলো দেখার পর বেশ কিছুদিন পর্যন্ত শিশুকে এসব পণ্যে অভ্যস্ত করানো উচিত নয়। কীভাবে নবজাতক সন্তানের ত্বকের যত্ন নিবেন চলুন জেনে নেই।
নবজাতকের ত্বকের যত্নে খেয়াল রাখবেন যেসব বিষয়ে
নবজাতকের যত্নে বেশ কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখা প্রয়োজন। এগুলো আমাদের নবজাতকের স্বাস্থ্যের উন্নতি বজায় রাখতে দারুণ কার্যকর। এমন সকল টিপস আমি শেয়ার করেছি, তাহলে দেরি না করে শুরু করি?
ধোয়া কাপড় পরাবেন
নবজাতক শিশুকে যেই কাপড়টাই পরান না কেন, আগে ধুয়ে নিতে হবে। ত্বকের যত্ন নেয়ার শুরুতে এটা মানতে হবে সবার আগে। অনেকেই শিশুদের জন্য কাপড় আগে বানিয়ে বা কিনে রাখেন। এসব কাপড়ও ভালো করে মাইল্ড সাবান ও গরম পানি দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। শিশুর কাপড় সব সময় আলাদা ধুতে হবে। পরিবারের অন্য সদস্যদের শরীরে কোনো এলার্জি বা স্কিন প্রবলেম থাকলে সেগুলো শিশুর কাপড়েও লেগে থাকতে পারে। ফলে আক্রান্ত হতে পারে শিশুও।
ডায়াপার ব্যবহারে সতর্ক হোন
অনেকেই অল্প সময় পর পর শিশুর ডায়াপার বদলে দেন। এই বদলে দেয়ার সময়ও মানতে হবে কিছু নিয়ম। একটা ডায়াপার বদলে নিয়ে আরেকটা পরানোর আগে নরম সুতি কাপড় বা বেবি ওয়াইপস দিয়ে ভালো করে শিশুর শরীরের নিচের অংশ মুছে নিতে হবে। নতুন ডায়াপার পরানোর আগে শিশুর গায়ে কিছুক্ষণ যেন বাতাস লাগে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে র্যাশ ওঠার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসবে। ডায়াপার র্যাশ কমানোর জন্য পেট্রোলিয়াম জেলিও ব্যবহার করতে পারেন। এটি ব্যবহারে শিশুর শরীরে প্রোটেক্টিভ ব্যারিয়ার তৈরি হয়। সুরক্ষিত থাকে ত্বক।
মাইল্ড সাবান ব্যবহার করুন
নবজাতক শিশুদের ত্বক খুবই কোমল হয়। না বুঝে ব্যবহারের কারণে যে কোনো প্রোডাক্ট থেকেই শিশুর শরীরে র্যাশ হতে পারে। তাই এ বয়সীদের জন্য ব্যবহার করতে হবে মাইল্ড সাবান ও শ্যাম্পু।
পাউডার ব্যবহার করবেন না
নবজাতকদের শরীর এমনিতেই বেশ নাজুক থাকে। এ বয়সে পাউডার ব্যবহার করলে সেটার গুঁড়ো অথবা পাউডারে থাকা কর্নস্টার্চের পার্টিকেলস শিশুর শরীরে প্রবেশ করতে পারে। আর এ থেকে ফুসফুসে সমস্যা হতে পারে। তাই পাউডার যতটা সম্ভব অ্যাভয়েড করাই ভালো।
তেল ব্যবহার করুন
নবজাতকের ত্বক ভালো রাখার জন্য তেল মালিশ করতে পারেন। নারকেল, আমন্ড, অলিভ যে কোনো তেলই শিশুর জন্য ভালো। তবে সুগন্ধীযুক্ত কোনো তেল শিশুর শরীরে মালিশ করবেন না।
পিলিং প্রবলেম হলে ময়েশ্চারাইজার ইউজ করুন
নবজাতক শিশুর ত্বক অনেক বেশি সংবেদনশীল। এ বয়সে শিশুর শরীর থেকে সাদা চামড়া উঠে আসে। একে বলে পিলিং। এ পরিস্থিতি হলে বুঝতে হবে শিশুর ত্বক যথেষ্ট ময়েশ্চারাইজড নয়। তাই গোসল শেষে অলিভ অয়েল বা ময়েশ্চারাইজিং বেবি লোশন ইউজ করলে ভালো।
ব্রণ হলে ভয় পাবেন না
জন্মের পর শিশুর শরীরে ছোট ছোট ব্রণ হতে পারে। মায়ের রক্তে হরমোনের প্রভাবে এ ব্রণ হয়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আবার কোনো ক্রিম লাগালে ভালো হবে এমন ভেবে হুট করে কিছু ব্যবহার করারও দরকার নেই। কিছুদিনের মধ্যে এটা আপনাআপনিই সেরে যাবে।
কুসুম গরম পানি ব্যবহার করুন
নিউবর্ন বেবির স্কিন খুবই সেনসিটিভ হয়। তাই গোসলের সময়ও সতর্ক থাকতে হয়। ঠান্ডা পানির বদলে গোসল করাতে হবে কুসুম গরম পানি দিয়ে। তবে এই সময়ও ৫-৭ মিনিটের বেশি নয়। বেশিক্ষণ শিশুর শরীরে পানি লাগিয়ে রাখা যাবে না। গোসল শেষে ত্বক শুষ্ক মনে হতে পারে। এ সময় বেবি লোশন বা ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিতে পারেন।
প্রতিদিন গোসল করাবেন না
শিশুর জন্মের পর প্রথম মাসে শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই। অতিরিক্ত পানি ব্যবহারে শিশুর ত্বক থেকে ন্যাচারাল অয়েল রিমুভ হয়ে স্কিন আরও ড্রাই হয়ে যেতে পারে। সপ্তাহে ২/৩ বার স্পঞ্জ বাথ করালেই যথেষ্ট।
বেবি ম্যাসাজ করুন
কোনো র্যাশ বা অন্য কোনো কন্ডিশনের কারণে যদি শিশুর অস্বস্তি লাগে, তবে বেবি ম্যাসাজ করতে পারেন। আলতো করে পুরো শরীরে ম্যাসাজ করলে শিশুর রিল্যাক্স ফিল হয়। এতে শিশুর কান্নাও থেমে যায়, ঘুমও ভালো হয়।
সূর্যের আলো থেকে শিশুকে সুরক্ষিত রাখুন
যতটুকু সম্ভব শিশুকে সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখতে হবে, এমনকি শীতের দিনেও। বাইরে যাওয়ার আগে হালকা ও নরম কাপড়ের পোশাক পরাতে হবে, হাত পা ঢেকে রাখতে হবে। অনেকেই শিশুর জন্য সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে চান। তবে ৬ মাস বয়সের আগে কখনোই নবজাতকদের শরীরে সানস্ক্রিন অ্যাপ্লাই করা যাবে না।
নখেরও যত্ন নিন
শিশুদের নখ খুব দ্রুত বড় হয়। আর সময়মতো সেগুলো না কাটলে মুখে নখের আঁচড় লাগতে পারে। নখ কাটার জন্য বেবি নেইল ক্লিপার ইউজ করতে পারেন। শিশু ঘুমিয়ে যাওয়ার পর কাটলেই ভালো। এতে সে ভয় পাবে না বা শরীরে আঘাত লাগবে না। সপ্তাহে অন্তত ১/২ বার নখ কেটে দিন। পায়ের নখ এত দ্রুত বড় হয় না। তাই মাসে একবার কাটলেও চলে।
ক্র্যাডল ক্যাপ রিমুভ করুন
নাম শুনে ভড়কে যাওয়ার কিছু নেই। ক্র্যাডল ক্যাপ নবজাতকের ত্বকে খুব সাধারণ একটি সমস্যা। এটি সাধারণত শিশুর মাথার ত্বক অর্থাৎ স্ক্যাল্পে দেখা দেয়। দেখতে কিছুটা ড্যানড্রাফের মতো। কিছুদিনের মধ্যে নিজ থেকেই এটি কমে আসে। যদি তা না হয়, তাহলে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নরম কাপড় দিয়ে স্ক্যাল্প ক্লিন করে নিতে পারেন।
কখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে?
নিয়মিত যত্ন নেয়ার পরও শিশুর ত্বকে সমস্যা হতে পারে। কিছু লক্ষণ দেখে মনে হতে পারে বাড়িতে সেগুলোর চিকিৎসা সম্ভব নয়। যে লক্ষণগুলো দেখলে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে-
- শিশুর শরীরে র্যাশের পরিমাণ না কমলে এবং বেশিরভাগ সময় শিশুর অস্বস্তি হলে
- শিশুর ত্বকে ইচিনেসের সমস্যা বেশি হলে
- যদি ন্যাপি র্যাশ বাড়তে থাকে
- শিশুর নাড়ি কাটার পর যদি সেই জায়গায় রেডনেস বা ইনফ্ল্যামেশন হয়
- ছোট ছোট লাল রঙের ব্রণের মতো হলে এবং সেগুলো থেকে যদি হলুদ রঙের পুঁজ বের হয়
- জ্বর হলে
প্রোডাক্ট কেনার আগে খেয়াল রাখুন
- শিশুর জন্য যে কোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে ভালো করে লেবেল পড়ে নিন। ফ্রেগ্রেন্স ও কেমিক্যাল ফ্রি প্রোডাক্ট দেখে কিনুন।
- হাইপোঅ্যালার্জেনিক প্রোডাক্ট বেছে নিন। এতে শিশুর শরীরে অ্যালার্জিক রিয়্যাকশন হবে না।
- প্যারাবেন ফ্রি প্রোডাক্ট কিনুন। প্যারাবেন থাকলে শিশুর ত্বকে ক্ষতি হতে পারে।
- সম্ভব হলে শিশুর ত্বকে অরগ্যানিক প্রোডাক্ট ইউজ করুন।
নবজাতকদের ত্বক খুবই নাজুক হয়। সঠিকভাবে যত্ন না নিলে তাদের ত্বকে ইরিটেশন, ইনফ্ল্যামেশন, র্যাশের মতো বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে। তাই সতর্ক থাকতে হবে আপনাকেই।
আরও কিছু পরামর্শ
১) গোসলের সময় সাবান ব্যবহার করবেন না।
২) শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে নন-ফ্রেগ্রেন্সযুক্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
৩) কিছু সময় পর পর ন্যাপি বা ডায়াপার বদলে নিন।
৪) শিশুর ব্যবহার করা পোশাক ও বেডিং শিট যেন কটনের হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।
0 জন কমেন্ট করেছেন
দয়া করে কমেন্ট নীতিমালা পড়ুন